পুজোর ছুটি পাহাড়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করতে আমাদের বেশ দেরি হয়েছিল। আর হাতে বাজেটও বেশ কম।
তাই দার্জিলিংয়ের বাজেট নিয়ে কোথায় যাবো ভাবতে ভাবতে ১৫ দিন আগে কেটে ফেললাম ট্রেনের টিকিট। RAC টিকিট মিলেও গেলো।
এবার পরিকল্পনার পালা। কি দেখবো ? সহযাত্রীরা উৎসুক। বুঝিয়ে বললাম পুরো প্যাকেজটা -"কদিন একটু নিরিবিলি থাকা ,পেটপুরে খাওয়াদাওয়া ,নির্জন পাহাড়ি উপত্যকা ,স্রোতস্বিনী নদী,নৈসর্গিক ঝর্ণা ,কিছু মন্দির ,মনেস্ট্রি ,চা বাগান আর অল্প হাঁটাহাঁটি " ।
কেউ আর বিশেষ কথা বাড়ালো না। যথাসময়ে সবাই কোলকাতা চিৎপুর স্টেশনে। ঘড়ির কাঁটা মিলিয়ে রাত ৮.৫৫ তে ট্রেন ছাড়লো। নৈহাটি পেরোতেই খাওয়াদাওয়ার পালা সেরে ঘুমের দেশে। এতকিছুর মধ্যে বলাই হয়নি যে আমাদের এবারের গন্তব্য "পূর্ব নেপাল "। ২০১৫ র সাংবিধানিক সংশোধনের পর নেপাল মোট ৭ টি রাজ্যে বিভক্ত। আমাদের গন্তব্য ১ নং রাজ্য (প্রস্তাবিত নাম কোশী বা পূর্বাঞ্চল )। যার রাজধানী বিরাটনগর। এবার ফিরে আসি গল্পে। ট্রেন যোগবাণী স্টেশন পৌঁছাতে দুপুর ১২.৩০ টা বেজে গেলো। স্টেশনটি খুবই ছোট আর স্টেশনের বাইরেটাও খুবই ঘিঞ্জি। টোটো রিকশা মারুতি ভ্যান মানুষের ভিড় জল কাদা সবকিছু মিলেমিশে একাকার। সময় নষ্ট না করে একটা মারুতি বুক করে নিলাম। যাবো বিরাটনগর ,৭ কিলোমিটার রাস্তা। বর্ডারের এপারের রাস্তা ভালো খারাপ মিশিয়ে। পথে ২ টো চেকপোস্ট পড়লো বটে কিন্তু " " টুরিস্ট " আর এক গাল হাসিতেই কাজ হয়ে গেলো। কোনো প্রশ্ন বা চেকিং কিছুই লাগলো না।
বিরাটনগর থেকে গাড়ি ভাড়া করে রওনা দিলাম ভেডেটারের দিকে, যেতে যেতে দেখে নেবো ৩ টি মন্দির "পিণ্ডেশ্বর শিব মন্দির ","দন্তকালী মন্দির ","বুদ্ধাসুব্বা মন্দির "।সব মন্দিরগুলো ধারান শহরে অবস্থিত। ধারান "সুনসারি " জেলার অন্যতম ব্যস্ত শহর। আমাদের গন্তব্য ভেডেটার সুনসারি আর ধানকুটা জেলার সীমানায় অবস্থিত। ঠিক সন্ধ্যে নামার মুখে আমরা পৌঁছে গেলাম ভেডেটার।ভেডেটার চক থেকে যে রাস্তাটার রাজরানী রোড নাম ওখানকার হোটেলগুলোর ভিউ সবচেয়ে ভালো। আমাদের গাড়ি সোজা থামলো হোটেল মাজেস্টিকের সামনে।ঘর পছন্দ হতেই আর দেরি না করে খাবার অর্ডার করে ঘরে ঢুকলাম। ফ্রেশ হয়ে কিছুক্ষন বসতেই ডাক পড়লো খাওয়ার। নিচের রেস্তোরাঁ ফাঁকাই ছিল। বেশ পরিষ্কার পরিছন্ন পরিপাটি করে সাজানো। কিছুক্ষণের মধ্যেই গরম গরম ফ্রাইড রাইস আর চিলি চিকেন চলে এলো। খেয়ে দেয়ে মনে পড়লো ওয়াইফাই এর কথা। বলাই বাহুল্য বাড়ির সাথে যোগাযোগের একমাত্র ভরসা এখন ওয়াইফাই। এখানকার সব হোটেলেই ওয়াইফাই আছে , স্পিড ও বেশ ভালো। এরপর বেরোলাম রাস্তার দিকে ,ভেডেটার পার্ক থেকে নিচের ধারন শহরটা অসাধারণ লাগছিলো।
পরেরদিন সকালে প্রচন্ড ঠান্ডা উপেক্ষা করে সূর্য ওঠার আগেই উঠে পড়লাম। বেশকিছুক্ষন পর সূর্য উঠলো। আকাশ একদম ঝকঝকে পরিষ্কার। ধীরে ধীরে দৃশ্যমান হতে থাকলো মাকালু লোৎসে আর এভারেস্টের চূড়া। প্রায় সকাল ১০ টা পর্যন্ত খুব ভালোভাবে দেখা যাচ্ছিলো। কফি খেয়ে খালি পেটেই বেরিয়ে পড়লাম হাঁটতে। যাচ্ছি চার্লস টাওয়ার। শুনলাম সদ্য খুলেছে। খুব বেশি হলে মিনিট পনেরো হেঁটেই কাউন্টার থেকে টিকিট নিয়ে টাওয়ার এর উপর। এখান থেকে ভিউ আরো দুর্দান্ত। আগে থেকেই পরিকল্পনা করে রেখেছিলাম সকালে আজ একটু নেপালি প্রাতরাশ করবো। তাই ঢুকে পড়লাম "হোটেল অরুণ ভ্যালি "র রেস্তোরায়। শুনেছিলাম এখানে নানারকম নেপালি ডিশ পাওয়া যায়। তাই "সেট ব্রেকফাস্ট " অর্ডার করে মাকালুর ভিউ দেখতে বসে পড়লাম। দারুন ভাবে সাজানো খাবার এসে গেলো কিছুক্ষনের মধ্যেই।
খাওয়া দাওয়া আজ সেরে ১২ টা নাগাদ তল্পিতল্পা গুটিয়ে রওনা দিলাম "হিলে"। ভেডেটার এর থেকে আরো উপরে। প্রথমেই গাড়ি থামলো "পতিভরা মন্দির " এর গেট এ। তারপর পদব্রজে মিনিট ২০তে পাহাড়ের মাথায় মন্দিরে।
এরপর আবার গাড়ি থামলো ৮ কিলোমিটার দূরে "নমস্তে ঝর্ণা" তে। এখানেও হাঁটাপথ প্রায় ২৫-৩০ মিনিট। কিন্তু ঝর্ণার বিশালতা সব কষ্ট ভুলিয়ে দেবে। এখানে ঘন্টা খানেক কাটিয়ে আবার গাড়ি ছুটলো। চারপাশে মনোরম দৃশ্য আর নানারকম চাষবাস দেখতে দেখতে এসে পড়লাম তামোর ব্রিজে। এখানে থাকারও ব্যবস্থা আছে। জায়গাটা দারুন। "ধানকুটা বাজার" কে পিছনে ফেলে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি হিলের দিকে ।
হিলের "তোম্বা চক " খুব ঘিঞ্জি। এখানে বেশ কিছু সস্তা হোটেলও দেখলাম কিন্তু মন ভরলো না। আমাদের সারথি তীর্থরাজ দা বললেন "হরাইজন মাউন্টেন রিসর্ট " এর কথা।
দূর থেকে দেখে আর পছন্দ অপছন্দের কথা নয় পকেটের কথাই বেশি মনে হচ্ছিলো। ভাড়াটা একটু বেশি হলেও একদিন থাকবো মনস্থির করলাম। রিসর্ট টা এককথায় অনবদ্য। ভিতরের ডেকোরেশন আর লোকেশন এর তুলনায় ভাড়া কমই বলা যায়। কিন্তু এখানে খাওয়াদাওয়ার মান অতটা ভালো নয় আর দামটাও বেশ চড়া । বিকেলের চিকেন নুডুলস খেয়ে স্থির করলাম রাতের খাবার খেতে "তংবা চক " যেতে হবে। বলে রাখা ভালো এখানে কোনো পাবলিক ট্রান্সপোর্ট পাওয়া মুশকিল। হোটেলে বললে ওরাই ফোন করে অটো ডেকে দেবে । সন্ধ্যে ৭.৩০ এ "তংবা চক " একেবারে সুনসান। একটাই দোকান খোলা "গাজুর হোটেল "। জানা গেলো হোটেল বন্ধ হওয়ার সময় হয়েছে তাই বেশি কিছু পাওয়া যাবে না। শুধু "ফ্রাইড রাইস- চিলিচিকেন " বা নুডুলস। আমরা বিনা বাক্যব্যয়ে "ফ্রাইড রাইস- চিলিচিকেন " এ ভোট দিলাম।খাবার আসতে বেশ কিছুক্ষন বাকি। মালিক দম্পতির সাথে জুড়ে দিলাম গল্প। ভদ্রলোক কোলকাতার ব্যাপারে বেশি কিছু জানেন না কিন্তু দেশের অতিথি বলে বেশ আপ্যায়ন করলেন আর আমাদের বিলে কিছু ডিসকাউন্ট ও দিলেন। সামান্য হলেও সেটা খুব সম্মানের। খাওয়াদাওয়া শেষ হলে উনিই একটা অটো ডেকে দিলেন ফেরার জন্য। উনি না সাহায্য করলে সেদিন রাতে খুব বিপদে পড়তে হতো আমাদের। যাইহোক হিলে তে রাতে ঠান্ডাটা মারাত্মক সাথে জোরে বয়ে যাওয়া হওয়াটা একেবারে হাড় কাঁপানো। তখনি ঠিক করলাম আর নয় আবার ফিরে যাবো ভেডেটারে। হোটেল রিসেপশনে সকালে গাড়ি লাগবে তাই রাতেই বলে দিলাম। সকাল সকাল সূর্যোদয় দেখলাম কিন্তু মেঘের জন্য কোনো পিক দেখা গেলো না। এখন পুরো রিসর্ট টা ভালো করে ঘুরে দেখলাম। কিছুক্ষন পর গাড়ি ও এসে গেলো।মালপত্র বেঁধে প্রথম স্টপ "গুরাসে "।এখানে একদিকে পাহাড়ি উপত্যকা জুড়ে চা বাগান আর অন্যদিকে পাহাড়ের গায়ে ধাপ কেটে নানারকম সবজি আর গাঁদা ফুলের চাষ।
বেশ কিছুক্ষন ভেসে বেড়ানো মেঘগুলোকে ফ্রেম বন্দি করে এবার যাবো "পাখরিবাস " এর দিকে। যাওয়ার সময় আবার “তোঙবা চক " এ দাঁড়ালাম "গাজুর হোটেলে "।ভাত ডাল মাংস ডিম্ সবই খাওয়ালেন। শেষে যাওয়ার সময় একটা মিনারেল ওয়াটারের বোতল দিলেন। দাম কিছুতেই নিতে চাইলেন না বললেন "এটা দেশের অতিথির জন্য ছোট্ট উপহার "।যাইহোক নিমা জিকে বিদায় জানিয়ে হিলের একমাত্র গুম্ফা দেখে গাড়ি এগিয়ে চললো কাঁচা ধুলো ওড়া রাস্তা ধরে।
মিনিট চল্লিশ পর নামলাম "পাখরিবাস "।
মিনিট চল্লিশ পর নামলাম "পাখরিবাস "।
এগ্রিকালচারাল রিসার্চ সেন্টার ,চা বাগান আর লেক নিয়ে এখানে একপাশে বসে আছেন দেবাদিদেব মহেশ্বর অন্যদিকে ধ্যানমগ্ন বুদ্ধা। এবার রওনা দিলাম ভেডেটার এর দিকে। দুপুর দুপুর পৌঁছেই "অরুন ভ্যালি " হোটেলে জমিয়ে মাংস ভাত আর দই । ওখানকার মালিক বিষ্ণুরাজ জিও দারুন মিশুকে প্রকৃতির। দ্বিতীয়বার ফিরে আসায় উনি একটু অবাক। আমায় বললেন রাতে একটু "ঢেড়" খেয়ে দেখতে। মোবাইল এ ছবিটা এগিয়ে দিলেন। ছবি দেখেই রাতের জন্য অর্ডার করে দিলাম।
বিকেলটা কফি খেতে খেতে হোটেলের ব্যালকনি আর ভেডেটার পার্কেই কেটে গেলো। রাত ৮ টা নাগাদ খেয়ে দেখলাম " ঢেড় " ।১২ রকমের পদ নিয়ে বিশেষ থালি। অসাধারণ পরিবেশন আর দারুন খেতে। অদ্য শেষ রজনী। তাই তাড়াতাড়ি ঘুমের দেশে।
গরম কফি দিয়ে পরের দিনটা শুরু হলো তবে আজ মেঘের কারণে আর মাকালু দর্শন হলো না। আগে বলে রেখেছিলাম তাই গাড়িতে মালপত্র রেখে মাজেস্টিকের হিসেব পত্র মিটিয়ে আবার " অরুন ভ্যালি " ।আগে থেকে বলা ছিল তাই যাওয়া মাত্রই গরম গরম ভাত আর চিকেন। শেষ দিন বলে কমপ্লিমেন্টারি স্যালাড ও পাওয়া গেল,আর ওখানকার দই টাও দারুন খেতে।পেট পুরে খাওয়াদাওয়া সেরে ভেদেতারকে বিদায় জানিয়ে রওনা দিলাম প্রায় ১০.৩০ নাগাদ । এক ঘণ্টার মধ্যে পৌঁছে গেলাম ধারান শহরে ।আবার সেই চেনা ভিড় যানজট কোলাহল । যোগবানি স্টেশান পৌঁছলাম দুপুর ১.৪০ নাগাদ ।
গরম কফি দিয়ে পরের দিনটা শুরু হলো তবে আজ মেঘের কারণে আর মাকালু দর্শন হলো না। আগে বলে রেখেছিলাম তাই গাড়িতে মালপত্র রেখে মাজেস্টিকের হিসেব পত্র মিটিয়ে আবার " অরুন ভ্যালি " ।আগে থেকে বলা ছিল তাই যাওয়া মাত্রই গরম গরম ভাত আর চিকেন। শেষ দিন বলে কমপ্লিমেন্টারি স্যালাড ও পাওয়া গেল,আর ওখানকার দই টাও দারুন খেতে।পেট পুরে খাওয়াদাওয়া সেরে ভেদেতারকে বিদায় জানিয়ে রওনা দিলাম প্রায় ১০.৩০ নাগাদ । এক ঘণ্টার মধ্যে পৌঁছে গেলাম ধারান শহরে ।আবার সেই চেনা ভিড় যানজট কোলাহল । যোগবানি স্টেশান পৌঁছলাম দুপুর ১.৪০ নাগাদ ।
কোথায় থাকবেন
ভেডেটারে প্রচুর থাকার হোটেল রয়েছে। রাজরানী রোডের উপর যে হোটেল গুলো রয়েছে সেগুলো হলো
- Hotel Arun Valley
- Hotel Majestic
- Hotel SMS
- Hotel Dreams
- Hotel Tamor Valley
- Hotel Makalu View
- Hotel Hillside View
- Hotel Rohit and Lodge
❤️❤️
ReplyDelete