experience bengal sittong homestay,rishaan cottage sittong,sitting to siliguri distance,sittong orange garden,sitting to tinchuley distance, sitong to kalimpong, sittong khasmahal, sittong weather, himalayan homestay sitong, shelpu, sitong yaksaa resort, sitting to darjeeling distance, sitting to njp distance jogighat, sitong yaksaa resort, mukhia homestay sittong, humro home chatakpur,hangkhim homestay,ghalaytar,humro home 6th mile,bunkulung mirik homestay, chhyolom kyomg homestay, sittong society, khasmahal village homestay,how to reach sittong,njp to sittong,siliguri to sittong,sittong homestay booking, bishesh homestay sittong,sittong tour,humro home sittong,sittong village homestay sittong west bengal
দার্জিলিং হিমালয়ের কোলে কার্শিয়াং মহকুমার এক ছোট্ট,শান্ত পাহাড়ি জনপদ সিটং।মহানন্দা অভয়ারণ্যের একদম উপর দিকে এর অবস্থান,উচ্চতা প্রায় 4500 ফুট।কমলালেবুর গ্রাম হিসেবেই এর খ্যাতি।গ্রামের বেশিরভাগ বাড়ি বা হোমস্টের সাথে লাগোয়া কমলালেবুর বাগান,নভেম্বর থেকে জানুয়ারির মধ্যে গেলে দেখা যাবে কমলালেবুর ভারে গাছগুলি কেমন নুয়ে পড়েছে।এই গ্রামেরই সুশীলা রাই আর ভাস্কর থাপার "হেরিটেজ হোমস্টে" তে দুদিন কাটিয়ে এলাম।
ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে ডুয়ার্স,পাহাড়ের সর্বত্রই ঠাঁই নেই,ঠাঁই নেই অবস্থা।অনেক ফোনাফোনি করে শেষমেষ সুশীলা রাই এর সঙ্গে কথা বলে ওনার হোমস্টেতে দুদিনের জন্য দুটো ঘর বুক করা গেল।তাও আমাদের মনোমতো দিনে হল না।আমরা 28,29 চেয়েছিলাম।কিন্তু উনি জানালেন 27,28 দিতে পারবেন।তাও একটা দল বুকিং ক্যানসেল করেছে বলে।অগত্যা তাতেই রাজি হতে হল।পরদিনই ওনার দেওয়া ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা ফেলে দিলাম।যা হোক থাকার জায়গা তো নিশ্চিত হল,কিন্তু ট্রেনের টিকিটের যে বিশাল ওয়েটিং লিস্ট তাতে যাওয়ার ব্যাপারে একটা বিরাট প্রশ্নচিহ্ন রয়েই গেল।
শেষপর্যন্ত আগের দিন শতাব্দী এক্সপ্রেসের টিকিট পেলাম।তাই সই।বাই যখন উঠেছে তখন কটক যেতেই হবে।তবে প্ল্যানটা একটু পরিবর্তন করতে হল।আগে ঠিক ছিল এনজেপিতে নেমে ফ্রেশ হয়ে গাড়ি বুক করে ওখান থেকেই সোজা রওনা দেব সিটং এর উদ্দেশে।কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ঠিক করলাম সেরাতটা শিলিগুড়ির কোন হোটেলে কাটিয়ে পরদিন সকালে রওনা হব।কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামের কাছে একটা হোটেলে ঘরও বুক করে নিলাম।
যাওয়ার দিন যথারীতি ভারতীয় রেলের নিয়মানুবর্তিতার ধারাবাহিকতা বজায় রেখে ট্রেন মাত্র একঘন্টা দেরিতে ছেড়ে রাত সাড়ে দশটার জায়গায় সোয়া বারোটায় এনজেপি পৌঁছাল।
পরদিন সকালে রওনা হতে একটু দেরীই হয়ে গেল।আমাদের মোট আট জনের দল।দরদাম করে 3000 টাকায় একটা বোলেরো গাড়ি ঠিক হল,শুধু ড্রপিং।পথের দূরত্ব প্রায় 75 কিমি।কার্শিয়াং,দিলারাম,বাগোড়া ঘারেটিয়ার হয়ে সিটং।কার্শিয়াঙের আগে রোহিনীতে ড্রাইভার গাড়ি দাঁড় করাল লাঞ্চের জন্য।আমরাও টুকটাক মোমো,পকোড়া,চা ইত্যাদি দিয়ে কিছুটা ক্ষুণ্ণিবৃত্তি করলাম।সুশীলাজিকে আগেই বলা ছিল আমরা ওখানে পৌঁছে লাঞ্চ করব।কিন্তু রাস্তায় দেরী হয়ে যাবে বুঝে ফোন করে বারণ করে দেওয়া হল। রাস্তার অবস্থা জায়গায় জায়গায় খারাপ।ড্রাইভার আগেই জানিয়েছিল সে ওই হোমস্টে ঠিক চেনে না,তবে জিজ্ঞেস করে করে ঠিক পৌঁছে দেবে।
যাই হোক খোঁজ করতে করতে যখন সুশীলাজির হেরিটেজ হোমস্টেতে গিয়ে পৌঁছালাম তখন ঘড়ির কাঁটা প্রায় চারের ঘর ছুঁয়েছে।কপালে লাল টীকা পড়িয়ে আমাদের অভ্যর্থনা করে ভিতরে নিয়ে যাওয়া হল।হোমস্টেতে মোট তিনটি ঘর,দুটিতে অতিথিরা রয়েছেন।সুশীলাজি অনুরোধ করলেন আমাদের একটি পরিবার যদি একটু দূরেই ওনার ভাইয়ের বাড়িতে থাকি,সে রাতটার মত।পরদিন উনি এক জায়গাতেই করে দেবেন।আমরা রাজি হয়ে গেলাম।কমলালেবু আর এলাচের বাগানের মধ্যে দিয়ে কিছুটা গিয়ে পৌঁছালাম সুশীলাজির ভাইয়ের বাড়িতে।দোতলার উপর একটাই ঘর,ওনাদের নিজেদের ব্যবহারের।আমাদের জন্য খুলে দিলেন।আমাদের বেশ পছন্দই হল,যার ফলে পরদিনও ওখানেই থেকে গেলাম।একটু ফ্রেশ হতেই চা বিস্কুট এসে গেল।একটু বাদে পকোড়ার সঙ্গে আর একদফা চা।রাতে ক্যাম্প ফায়ারের ব্যবস্থা ছিল।আগুনের চারপাশে গোল হয়ে বসে আমাদের আড্ডা বেশ জমে উঠল।অন্য ঘরের অতিথিরাও এসে যোগ দিলেন।একটু পরে সুশীলাজি আর ওনার কর্তাও এসে যোগ দিলেন।জানলাম উনি অস্ট্রেলিয়ায় থাকেন।সেদিনই দেশে ফিরেছেন।মোবাইলে গান চালিয়ে সুশিলাজিই প্রথম নাচ শুরু করলেন,তার দেখাদেখি বাকিরাও একে একে যোগ দিল।নাচে,গানে আড্ডায় সেদিনের সন্ধ্যাটা বেশ প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছিল।রাত বেড়ে যাচ্ছে দেখে অনিচ্ছাসত্বেও উঠতে হল।ভাত,রুটি,ডাল,বিনসের তরকারি আর এগকারি সহযোগে ডিনার সেরে ডবল কম্বলের তলায় সেঁধিয়ে যেতেই দুচোখে ঘুম নেমে এল।
ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে ডুয়ার্স,পাহাড়ের সর্বত্রই ঠাঁই নেই,ঠাঁই নেই অবস্থা।অনেক ফোনাফোনি করে শেষমেষ সুশীলা রাই এর সঙ্গে কথা বলে ওনার হোমস্টেতে দুদিনের জন্য দুটো ঘর বুক করা গেল।তাও আমাদের মনোমতো দিনে হল না।আমরা 28,29 চেয়েছিলাম।কিন্তু উনি জানালেন 27,28 দিতে পারবেন।তাও একটা দল বুকিং ক্যানসেল করেছে বলে।অগত্যা তাতেই রাজি হতে হল।পরদিনই ওনার দেওয়া ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা ফেলে দিলাম।যা হোক থাকার জায়গা তো নিশ্চিত হল,কিন্তু ট্রেনের টিকিটের যে বিশাল ওয়েটিং লিস্ট তাতে যাওয়ার ব্যাপারে একটা বিরাট প্রশ্নচিহ্ন রয়েই গেল।
শেষপর্যন্ত আগের দিন শতাব্দী এক্সপ্রেসের টিকিট পেলাম।তাই সই।বাই যখন উঠেছে তখন কটক যেতেই হবে।তবে প্ল্যানটা একটু পরিবর্তন করতে হল।আগে ঠিক ছিল এনজেপিতে নেমে ফ্রেশ হয়ে গাড়ি বুক করে ওখান থেকেই সোজা রওনা দেব সিটং এর উদ্দেশে।কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ঠিক করলাম সেরাতটা শিলিগুড়ির কোন হোটেলে কাটিয়ে পরদিন সকালে রওনা হব।কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামের কাছে একটা হোটেলে ঘরও বুক করে নিলাম।
যাওয়ার দিন যথারীতি ভারতীয় রেলের নিয়মানুবর্তিতার ধারাবাহিকতা বজায় রেখে ট্রেন মাত্র একঘন্টা দেরিতে ছেড়ে রাত সাড়ে দশটার জায়গায় সোয়া বারোটায় এনজেপি পৌঁছাল।
পরদিন সকালে রওনা হতে একটু দেরীই হয়ে গেল।আমাদের মোট আট জনের দল।দরদাম করে 3000 টাকায় একটা বোলেরো গাড়ি ঠিক হল,শুধু ড্রপিং।পথের দূরত্ব প্রায় 75 কিমি।কার্শিয়াং,দিলারাম,বাগোড়া ঘারেটিয়ার হয়ে সিটং।কার্শিয়াঙের আগে রোহিনীতে ড্রাইভার গাড়ি দাঁড় করাল লাঞ্চের জন্য।আমরাও টুকটাক মোমো,পকোড়া,চা ইত্যাদি দিয়ে কিছুটা ক্ষুণ্ণিবৃত্তি করলাম।সুশীলাজিকে আগেই বলা ছিল আমরা ওখানে পৌঁছে লাঞ্চ করব।কিন্তু রাস্তায় দেরী হয়ে যাবে বুঝে ফোন করে বারণ করে দেওয়া হল। রাস্তার অবস্থা জায়গায় জায়গায় খারাপ।ড্রাইভার আগেই জানিয়েছিল সে ওই হোমস্টে ঠিক চেনে না,তবে জিজ্ঞেস করে করে ঠিক পৌঁছে দেবে।
যাই হোক খোঁজ করতে করতে যখন সুশীলাজির হেরিটেজ হোমস্টেতে গিয়ে পৌঁছালাম তখন ঘড়ির কাঁটা প্রায় চারের ঘর ছুঁয়েছে।কপালে লাল টীকা পড়িয়ে আমাদের অভ্যর্থনা করে ভিতরে নিয়ে যাওয়া হল।হোমস্টেতে মোট তিনটি ঘর,দুটিতে অতিথিরা রয়েছেন।সুশীলাজি অনুরোধ করলেন আমাদের একটি পরিবার যদি একটু দূরেই ওনার ভাইয়ের বাড়িতে থাকি,সে রাতটার মত।পরদিন উনি এক জায়গাতেই করে দেবেন।আমরা রাজি হয়ে গেলাম।কমলালেবু আর এলাচের বাগানের মধ্যে দিয়ে কিছুটা গিয়ে পৌঁছালাম সুশীলাজির ভাইয়ের বাড়িতে।দোতলার উপর একটাই ঘর,ওনাদের নিজেদের ব্যবহারের।আমাদের জন্য খুলে দিলেন।আমাদের বেশ পছন্দই হল,যার ফলে পরদিনও ওখানেই থেকে গেলাম।একটু ফ্রেশ হতেই চা বিস্কুট এসে গেল।একটু বাদে পকোড়ার সঙ্গে আর একদফা চা।রাতে ক্যাম্প ফায়ারের ব্যবস্থা ছিল।আগুনের চারপাশে গোল হয়ে বসে আমাদের আড্ডা বেশ জমে উঠল।অন্য ঘরের অতিথিরাও এসে যোগ দিলেন।একটু পরে সুশীলাজি আর ওনার কর্তাও এসে যোগ দিলেন।জানলাম উনি অস্ট্রেলিয়ায় থাকেন।সেদিনই দেশে ফিরেছেন।মোবাইলে গান চালিয়ে সুশিলাজিই প্রথম নাচ শুরু করলেন,তার দেখাদেখি বাকিরাও একে একে যোগ দিল।নাচে,গানে আড্ডায় সেদিনের সন্ধ্যাটা বেশ প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছিল।রাত বেড়ে যাচ্ছে দেখে অনিচ্ছাসত্বেও উঠতে হল।ভাত,রুটি,ডাল,বিনসের তরকারি আর এগকারি সহযোগে ডিনার সেরে ডবল কম্বলের তলায় সেঁধিয়ে যেতেই দুচোখে ঘুম নেমে এল।
পরদিন 28 শে ডিসেম্বর।সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে চা খেয়ে গ্রামটা পায়ে হেঁটে ঘুরে দেখতে বেরোলাম।আমাদের হোমস্টেটা লোয়ার সিটং এ।মূলত লেপচা জনজাতি অধ্যুষিত গ্রাম।বুক ভরে টাটকা বাতাস নিতে নিতে পাকদণ্ডি বেয়ে বেশ খানিকটা উপরে উঠে এলাম।একটা দোকানে চায়ের অর্ডার দিয়ে একটু জিরিয়ে নিচ্ছিলাম।দোকানের সামনেই দেখলাম একটা মণ্ডপ বাঁধা হচ্ছে।দোকানের মালকিনের সাথে কথা বলে জানতে পারলাম আর দুদিন বাদেই ওনার মেয়ের বিয়ে,সেই জন্যই মণ্ডপ বাঁধা হচ্ছে।ফেরার পথে দেখি একটা ফুল,বেলুন দিয়ে সাজানো গাড়িতে অন্য কোন বিয়ের হবু পাত্র চলেছে।হোমস্টেতে ফিরে রুটি,তরকারি,ডিম সিদ্ধ সহযোগে জলখাবার পর্ব সাঙ্গ করে পাশেই লাগোয়া অর্গানিক গার্ডেন ঘুরে দেখলাম।বিনস, স্কোয়াশ,বাঁধাকপি,রাইশাক,মূলো,মটরশুটি, পালং আরো কত রকমের সব্জির চাষ হচ্ছে,সব জৈব সারে।ছোট ছোট গাছে এক রকমের লাল টুকটুকে ফল ধরে আছে।জিজ্ঞেস কর জানলাম এগুলি পাহাড়ি টমাটো,চাটনি,আচার ইত্যাদি হয়।এছাড়া প্রচুর বড় এলাচ আর কমলালেবুর গাছ তো আছেই।এক দম্পতি নিজেরাই গাছের পরিচর্যা করছেন,জল দিচ্ছেন।
আগের দিনই সুশীলাজিকে বলে রেখেছিলাম সাইট সিয়িং এর জন্য গাড়ির কথা।দক্ষিণা 2500 টাকা।দশটা নাগাদ বেরিয়ে পড়া গেল।প্রথমে গেলাম গ্রামেরই অন্য প্রান্তে কমলালেবুর বাগানে।বাগানের কর্মচারী জানালেন যত খুশি ছবি তুলুন,কিন্তু গাছ থেকে লেবু পাড়া যাবে না।কারণ সব লেবুই বিক্রি হয়ে গেছে।কিছু কিছু গাছে তো এত লেবু ধরেছে যে নীচ থেকে বাঁশের সাপোর্ট দিতে হয়েছে, যেমনটা ফলভারে নুয়ে পড়া আমগাছের ক্ষেত্রে দেখেছি। মাটির দু তিন হাত উপর থেকেই লেবু ঝুলে আছে।মনের সুখে অনেক ছবি তুলে রওনা পরের গন্তব্যের দিকে।
নামথিং পোখরি-চারিদিকে পাইন গাছের জঙ্গলের মধ্যে এই পুকুর প্রসিদ্ধ লুপ্তপ্রায় হিমালয়ান স্যালাম্যান্ডারের আবাসস্থল হিসেবে।যদিও পুকুর এখন একদম শুকনো।শুনলাম সরীসৃপ জাতীয় এই প্রাণীগুলি অন্ধকারাচ্ছন্ন জায়গায়,বড় বড় পাথরের খাঁজেই থাকতে পছন্দ করে।তাই এদের দেখা পাওয়া খুবই মুশকিল।পুকুরের চারপাশের বিশাল বিশাল পাইন গাছে ছাওয়া পথ ধরে হাঁটতে বেশ ভালো লাগছিল।
সেখান থেকে গেলাম অহলদাঁড়া ভিউ পয়েন্ট।একটা পাহাড়ের একদম উপরে এর অবস্থান,প্রায় 360 ডিগ্রি ভিউ পাওয়া যায়।অনেক নীচ দিয়ে তিস্তা নদী বয়ে চলেছে।একটা ছোট্ট সমতল করা জায়গায় কয়েকটা রংবেরং এর তাঁবু খাটানো।কয়েকজন সেখানে ট্রেক করে এসেছেন,দুদিন থাকবেন।শুনলাম প্রচুর পাখির দেখা পাওয়া যায় এখানে।আর বার্ড ওয়াচারদের স্বর্গরাজ্য লাটপাঞ্চার এখানে থেকে মাত্র 5 কিমি দূরে।আমাদের অবশ্য এযাত্রায় আর সেখানে যাওয়া হল না।
এরপর গেলাম এক চা বাগানে।পাহাড়ের ঢালে চা গাছের সারি নেমে গেছে,এ দৃশ্য তো কত দেখেছি,তাও কখনও পুরোনো হয় না।
এদিনের শেষ গন্তব্য ছিল রিয়াং নদী ও তার উপরে সেতু।বড় বড় পাথরের বোল্ডারের মধ্যে দিয়ে নদী আপন খেয়ালে বয়ে চলেছে।চারিদিকের দৃশ্য অসাধারণ।পাহাড়ি পথে বার বার ওঠানামা করতে করতে সকালের জলখাবার কখন হজম হয়ে গেছে।পাশেই একটা দোকানে গরম আলু পকোড়া তৈরি হচ্ছিল।চায়ের সঙ্গে ভালোই জমে গেল।
আমাদের আস্তানায় ফিরতে ফিরতে প্রায় সাড়ে তিনটে বেজে গেল।লাঞ্চ রেডি ছিল।তাই আর দেরী না করে তার সদ্ব্যবহার করতে বসে গেলাম।মেনুতে ছিল ভাত,বিনস মটরশুটির তরকারি,ডাল আর পাহাড়ি মুরগির ঝোল।খিদের মুখে অমৃতসমান।
আসার আগে নেটে দেখেছিলাম আবহাওয়া পূর্বাভাস অনুযায়ী সেদিন বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে।আজকাল আর সেদিন নেই যে আবহাওয়া দপ্তর যা বলবে বাস্তবে ঘটবে ঠিক তার উল্টোটা।এক্ষেত্রে পূর্বাভাসকে অক্ষরে অক্ষরে সত্যি প্রমাণ করে একটু পরেই বৃষ্টি শুরু হল।প্রথমে আস্তে আস্তে,তারপর বেশ জোরে।তার সাথে পাল্লা দিয়ে ঠাণ্ডা বাড়ছে।সন্ধ্যেবেলাতেই কম্বলের তলায় সেঁধিয়ে গেছি।এর মধ্যেই চলে এল গরম ধোঁয়া ওঠা ভেজ মোমো আর দু রাউন্ড চা।বৃষ্টি শুরুর সাথে সাথে কারেন্ট বাবাজি সেই যে গায়েব হয়েছেন,তার আর কোন পাত্তা নেই।লণ্ঠন আর মোমবাতির আলোয় তাস নিয়ে বসে গেলাম।
নটা নাগাদ ডিনারের ডাক পড়ল।কিন্তু কম্বলের উষ্ণতা ছেড়ে ওঠা অসম্ভব।সুশীলাজিকে সেকথা বলতে উনি খাওয়ার জায়গায় কাঠের আগুন জ্বালিয়ে দিলেন।আগুন ঘিরে বসে রুটি,ডাল,ফুলকপির তরকারি আর ডিমকারি সহযোগে ডিনারের সেই অভিজ্ঞতা অনেকদিন মনে থাকবে।
সেদিন রাতে দুটো করে কম্বল চাপিয়েও যেন ঠান্ডা বাগ মানছিল না।পরে শুনেছি সে রাতে তাপমাত্রা 2 ডিগ্রিতে নেমে গিয়েছিল।
পরদিন ঘুম ভাঙতেই এক ঝলমলে সকাল আমাদের অভ্যর্থনা করল।অভ্যেসমত হাঁটতে বেড়িয়ে গ্রামের একমাত্র ছোট্ট সুন্দর চার্চটা দেখে এলাম।ফিরে এসে জলখাবার পর্ব শেষ করে দোতলার ছাদে নরম রোদ্দুরে বসে কিছু সময় কাটলো।উত্তর দিকে সপার্ষদ কাঞ্চনজঙ্ঘা স্বমহিমায় ঝলমল করছে।প্রচুর ছবি তুললাম।
অবশেষে এসে গেল সেই বিষাদমাখা মুহূর্ত।সুশীলাজি ও তার সহযোগীদের কাছ থেকে বিদায় নেওয়ার পালা।সবাই মিলে গ্রুপ ছবি তোলা হল।গাড়ি তৈরি ছিল।মালপত্র চাপিয়ে রওনা হলাম।সুশীলাজিই বললেন ফেরার সময় আমরা যদি মংপু হয়ে ফিরি তবে সিঙ্কোনা ফ্যাক্টরি আর রবীন্দ্রনাথের স্মৃতি বিজড়িত মৈত্রেয়ী দেবীর বাড়িও দেখে নিতে পারব।ভাড়া একই পড়বে,3000 টাকা।আমরা বলা বাহুল্য সানন্দে সে প্রস্তাবে রাজি হলাম।এযাত্রায় এটা আমাদের কাছে সত্যি এক উপরি পাওনা।
আগের দিনের দেখা সেই রিয়াং নদীর সেতু পেরিয়ে কিছুটা গিয়ে আমরা মংপু পৌছালাম।দুদিকের পাহাড় জুড়ে প্রচুর সিঙ্কোনা গাছের চাষ।অবশেষে পৌছানো গেল সেই পুণ্যস্থলে।মৈত্রেয়ী দেবীর স্বামী ডাঃ মনমোহন সেন ছিলেন পাশের লাগোয়া সিন্কোনা ফ্যাক্টরির ডাক্তার।এই বাড়িটি ছিল তার বাংলো।রবীন্দ্রনাথ মোট চারবার এখানে এসেছিলেন।এখানে বসেই তিনি ছেলেবেলা ও আরো বেশ কিছু প্রবন্ধ,গান,কবিতা ইত্যাদি রচনা করেন।অনেক ছবিও আঁকেন।এখন এটি মিউজিয়াম।কবিগুরুর ব্যবহৃত নানা জিনিস,লেখার পাণ্ডুলিপি,তার আঁকা ছবি সুন্দর ভাবে সাজানো।জুতো খুলে এই পবিত্র গৃহে প্রবেশ করে মন ভরে গেল।বাইরে বাগানে কবিগুরুর এক আবক্ষ মূর্তি।কেউ সেখানে ফুল রেখে গেছে।অন্তরের শ্রদ্ধাভরা প্রণাম জানিয়ে বেরিয়ে এলাম।পাশের সরকারি সিন্কোনা ফ্যাক্টরি লাঞ্চের জন্য বন্ধ ছিল।
এবার ঘরে ফেরার পালা।ফেরার পথে পড়ল রাম্বি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প।অবশেষে শিলিগুড়ি থেকে রাতের ট্রেন ধরে স্ব স্ব আস্তানায়।মন চল নিজ নিকেতনে।
সবশেষে কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য।যা প্রথম পর্বের শেষে অনেকেই জানতে চেয়েছেন।
1)আপার ও লোয়ার সিটং মিলিয়ে বেশ কয়েকটি হোমস্টে আছে।হামরো হোমস্টে,শিবালিক হোমস্টে, হেরিটেজ হোমস্টে ইত্যাদি।হেরিটেজ হোমস্টের ফোন নং-সুশীলা রাই-8967353238/8145866397
ভাস্কর থাপা-8348882220
2)খরচ মাথাপিছু 1200 টাকা প্রতিদিন মাথাপিছু, খাওয়া থাকা সব নিয়ে।
আগের দিনই সুশীলাজিকে বলে রেখেছিলাম সাইট সিয়িং এর জন্য গাড়ির কথা।দক্ষিণা 2500 টাকা।দশটা নাগাদ বেরিয়ে পড়া গেল।প্রথমে গেলাম গ্রামেরই অন্য প্রান্তে কমলালেবুর বাগানে।বাগানের কর্মচারী জানালেন যত খুশি ছবি তুলুন,কিন্তু গাছ থেকে লেবু পাড়া যাবে না।কারণ সব লেবুই বিক্রি হয়ে গেছে।কিছু কিছু গাছে তো এত লেবু ধরেছে যে নীচ থেকে বাঁশের সাপোর্ট দিতে হয়েছে, যেমনটা ফলভারে নুয়ে পড়া আমগাছের ক্ষেত্রে দেখেছি। মাটির দু তিন হাত উপর থেকেই লেবু ঝুলে আছে।মনের সুখে অনেক ছবি তুলে রওনা পরের গন্তব্যের দিকে।
নামথিং পোখরি-চারিদিকে পাইন গাছের জঙ্গলের মধ্যে এই পুকুর প্রসিদ্ধ লুপ্তপ্রায় হিমালয়ান স্যালাম্যান্ডারের আবাসস্থল হিসেবে।যদিও পুকুর এখন একদম শুকনো।শুনলাম সরীসৃপ জাতীয় এই প্রাণীগুলি অন্ধকারাচ্ছন্ন জায়গায়,বড় বড় পাথরের খাঁজেই থাকতে পছন্দ করে।তাই এদের দেখা পাওয়া খুবই মুশকিল।পুকুরের চারপাশের বিশাল বিশাল পাইন গাছে ছাওয়া পথ ধরে হাঁটতে বেশ ভালো লাগছিল।
সেখান থেকে গেলাম অহলদাঁড়া ভিউ পয়েন্ট।একটা পাহাড়ের একদম উপরে এর অবস্থান,প্রায় 360 ডিগ্রি ভিউ পাওয়া যায়।অনেক নীচ দিয়ে তিস্তা নদী বয়ে চলেছে।একটা ছোট্ট সমতল করা জায়গায় কয়েকটা রংবেরং এর তাঁবু খাটানো।কয়েকজন সেখানে ট্রেক করে এসেছেন,দুদিন থাকবেন।শুনলাম প্রচুর পাখির দেখা পাওয়া যায় এখানে।আর বার্ড ওয়াচারদের স্বর্গরাজ্য লাটপাঞ্চার এখানে থেকে মাত্র 5 কিমি দূরে।আমাদের অবশ্য এযাত্রায় আর সেখানে যাওয়া হল না।
এরপর গেলাম এক চা বাগানে।পাহাড়ের ঢালে চা গাছের সারি নেমে গেছে,এ দৃশ্য তো কত দেখেছি,তাও কখনও পুরোনো হয় না।
এদিনের শেষ গন্তব্য ছিল রিয়াং নদী ও তার উপরে সেতু।বড় বড় পাথরের বোল্ডারের মধ্যে দিয়ে নদী আপন খেয়ালে বয়ে চলেছে।চারিদিকের দৃশ্য অসাধারণ।পাহাড়ি পথে বার বার ওঠানামা করতে করতে সকালের জলখাবার কখন হজম হয়ে গেছে।পাশেই একটা দোকানে গরম আলু পকোড়া তৈরি হচ্ছিল।চায়ের সঙ্গে ভালোই জমে গেল।
আমাদের আস্তানায় ফিরতে ফিরতে প্রায় সাড়ে তিনটে বেজে গেল।লাঞ্চ রেডি ছিল।তাই আর দেরী না করে তার সদ্ব্যবহার করতে বসে গেলাম।মেনুতে ছিল ভাত,বিনস মটরশুটির তরকারি,ডাল আর পাহাড়ি মুরগির ঝোল।খিদের মুখে অমৃতসমান।
আসার আগে নেটে দেখেছিলাম আবহাওয়া পূর্বাভাস অনুযায়ী সেদিন বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে।আজকাল আর সেদিন নেই যে আবহাওয়া দপ্তর যা বলবে বাস্তবে ঘটবে ঠিক তার উল্টোটা।এক্ষেত্রে পূর্বাভাসকে অক্ষরে অক্ষরে সত্যি প্রমাণ করে একটু পরেই বৃষ্টি শুরু হল।প্রথমে আস্তে আস্তে,তারপর বেশ জোরে।তার সাথে পাল্লা দিয়ে ঠাণ্ডা বাড়ছে।সন্ধ্যেবেলাতেই কম্বলের তলায় সেঁধিয়ে গেছি।এর মধ্যেই চলে এল গরম ধোঁয়া ওঠা ভেজ মোমো আর দু রাউন্ড চা।বৃষ্টি শুরুর সাথে সাথে কারেন্ট বাবাজি সেই যে গায়েব হয়েছেন,তার আর কোন পাত্তা নেই।লণ্ঠন আর মোমবাতির আলোয় তাস নিয়ে বসে গেলাম।
নটা নাগাদ ডিনারের ডাক পড়ল।কিন্তু কম্বলের উষ্ণতা ছেড়ে ওঠা অসম্ভব।সুশীলাজিকে সেকথা বলতে উনি খাওয়ার জায়গায় কাঠের আগুন জ্বালিয়ে দিলেন।আগুন ঘিরে বসে রুটি,ডাল,ফুলকপির তরকারি আর ডিমকারি সহযোগে ডিনারের সেই অভিজ্ঞতা অনেকদিন মনে থাকবে।
সেদিন রাতে দুটো করে কম্বল চাপিয়েও যেন ঠান্ডা বাগ মানছিল না।পরে শুনেছি সে রাতে তাপমাত্রা 2 ডিগ্রিতে নেমে গিয়েছিল।
পরদিন ঘুম ভাঙতেই এক ঝলমলে সকাল আমাদের অভ্যর্থনা করল।অভ্যেসমত হাঁটতে বেড়িয়ে গ্রামের একমাত্র ছোট্ট সুন্দর চার্চটা দেখে এলাম।ফিরে এসে জলখাবার পর্ব শেষ করে দোতলার ছাদে নরম রোদ্দুরে বসে কিছু সময় কাটলো।উত্তর দিকে সপার্ষদ কাঞ্চনজঙ্ঘা স্বমহিমায় ঝলমল করছে।প্রচুর ছবি তুললাম।
অবশেষে এসে গেল সেই বিষাদমাখা মুহূর্ত।সুশীলাজি ও তার সহযোগীদের কাছ থেকে বিদায় নেওয়ার পালা।সবাই মিলে গ্রুপ ছবি তোলা হল।গাড়ি তৈরি ছিল।মালপত্র চাপিয়ে রওনা হলাম।সুশীলাজিই বললেন ফেরার সময় আমরা যদি মংপু হয়ে ফিরি তবে সিঙ্কোনা ফ্যাক্টরি আর রবীন্দ্রনাথের স্মৃতি বিজড়িত মৈত্রেয়ী দেবীর বাড়িও দেখে নিতে পারব।ভাড়া একই পড়বে,3000 টাকা।আমরা বলা বাহুল্য সানন্দে সে প্রস্তাবে রাজি হলাম।এযাত্রায় এটা আমাদের কাছে সত্যি এক উপরি পাওনা।
আগের দিনের দেখা সেই রিয়াং নদীর সেতু পেরিয়ে কিছুটা গিয়ে আমরা মংপু পৌছালাম।দুদিকের পাহাড় জুড়ে প্রচুর সিঙ্কোনা গাছের চাষ।অবশেষে পৌছানো গেল সেই পুণ্যস্থলে।মৈত্রেয়ী দেবীর স্বামী ডাঃ মনমোহন সেন ছিলেন পাশের লাগোয়া সিন্কোনা ফ্যাক্টরির ডাক্তার।এই বাড়িটি ছিল তার বাংলো।রবীন্দ্রনাথ মোট চারবার এখানে এসেছিলেন।এখানে বসেই তিনি ছেলেবেলা ও আরো বেশ কিছু প্রবন্ধ,গান,কবিতা ইত্যাদি রচনা করেন।অনেক ছবিও আঁকেন।এখন এটি মিউজিয়াম।কবিগুরুর ব্যবহৃত নানা জিনিস,লেখার পাণ্ডুলিপি,তার আঁকা ছবি সুন্দর ভাবে সাজানো।জুতো খুলে এই পবিত্র গৃহে প্রবেশ করে মন ভরে গেল।বাইরে বাগানে কবিগুরুর এক আবক্ষ মূর্তি।কেউ সেখানে ফুল রেখে গেছে।অন্তরের শ্রদ্ধাভরা প্রণাম জানিয়ে বেরিয়ে এলাম।পাশের সরকারি সিন্কোনা ফ্যাক্টরি লাঞ্চের জন্য বন্ধ ছিল।
এবার ঘরে ফেরার পালা।ফেরার পথে পড়ল রাম্বি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প।অবশেষে শিলিগুড়ি থেকে রাতের ট্রেন ধরে স্ব স্ব আস্তানায়।মন চল নিজ নিকেতনে।
সবশেষে কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য।যা প্রথম পর্বের শেষে অনেকেই জানতে চেয়েছেন।
1)আপার ও লোয়ার সিটং মিলিয়ে বেশ কয়েকটি হোমস্টে আছে।হামরো হোমস্টে,শিবালিক হোমস্টে, হেরিটেজ হোমস্টে ইত্যাদি।হেরিটেজ হোমস্টের ফোন নং-সুশীলা রাই-8967353238/8145866397
ভাস্কর থাপা-8348882220
2)খরচ মাথাপিছু 1200 টাকা প্রতিদিন মাথাপিছু, খাওয়া থাকা সব নিয়ে।
COMMENTS