Page Nav

HIDE

Grid

GRID_STYLE

Hover Effects

Months

{fbt_classic_header}

Breaking News:

latest

Jagdalpur and Araku By Kuheli Ghosh Bandyopadhyay

 প্রথম পর্ব পড়তে ক্লিক করুন
ভাইজ্যাক থেকে আরাকু যাবার সবচেয়ে ভালো উপায় হল সকাল ৭.০৫ এ বিশাখাপত্তনম কিরান্ডুল প্যাসেঞ্জার। ১১১ কিমি দূরে অবস্থিত উপত্যকাটি সমুদ্র সমতল থেকে ২৯৯০ ফুট উঁচু । আরাকু যাবার জন্য সড়কপথ থাকলেও ট্রেনে গেলেই ৫৮ টি টানেল ও ৮৪ টি ব্রিজ পেরিয়ে যাবার অভিজ্ঞতাই আলাদা । ট্রেন একের পর এক স্টেশন ছেড়ে যাচ্ছে, প্রতি স্টেশনেই আদিবাসী মানুষরা অপেক্ষায় রয়েছে তাদের ট্রেনের জন্য । এই পথ দিয়ে আর কোনো প্যাসেঞ্জার ট্রেন যেতে দেখিনি , শুধুই মাল গাড়ি , তেলের ট্যাঙ্কার , পাথর বোঝাই গাড়ি এই সবই দেখলাম । এই পথের প্রধান সমস্যা হল সিঙ্গল লাইন , তার ওপরে মালবাহী ট্রেন গুলো এতোটাই ভারি যে একসাথে দুটো ট্রেন পাশ করানোর ক্ষমতাও নেই লাইন গুলোর । আস্তে আস্তে চারপাশে ল্যান্ডস্কেপও বদলাতে শুরু করেছে, দূরে বেশ কিছু উঁচু উঁচু পাহাড় দেখা যাচ্ছে , আর নিচে সবুজে মোড়া চাষের জমি । এরপর শুরু হল ধীরে ধীরে পাহাড়ে ওঠা । একটা সাধারন প্যাসেঞ্জার ট্রেন যে পাহাড়ে উঠছে সেটা ভেবেই কেমন অনুভুতি হচ্ছিল । ট্রেনের ডানদিকে উপত্যকার ভিউ আর বাম দিকে পাহাড়। স্থানীয় মহিলা হকাররা বিভিন্ন ধরনের ফল বিক্রি করছে। এর মধ্যেই ঝমঝম শব্দ তুলে কয়েকটি ব্রিজ পেরিয়েছে ট্রেন ,যখন ব্রিজ পেরোচ্ছে তখন ট্রেনের গতি কমে যাচ্ছে , তাই জানলা দিয়ে বাইরে উঁকি মারলেই দেখা যাচ্ছে নিচের খাদ । আবার কোনো  টানেলে ঢোকার মূহুর্তে ট্রেনের পিছন থেকে সামনে দেখা যাচ্ছে সে দৃশ্যও অপূর্ব । একদিকে যেমন পড়ে গেলেই অবধারিত মৃত্যু আর অপর দিকে হালকা কুয়াশায় ঢাকা, গা ঘেঁষাঘেঁষি করে দাঁড়িয়ে পাহাড় আর ঘন সবুজ উপত্যকা এক কথায় স্বপ্নিল সুন্দর। প্রকৃতির এই সৌন্দর্য দু চোখে মেখে , মনের ক্যানভাসে বন্দি করে নিয়ে এগিয়ে চললাম ট্রেনের সাথে। টানেলে ঢোকার সাথে সাথেই যেমন অন্ধকার গ্রাস করছে পুরো ট্রেনটাকে তেমনি ছেলে বুড়ো সকলেই সজোরে চিৎকার জুড়ে দিচ্ছে , তাদের আওয়াজে কান পাতা দায় । ট্রেন বোরা গুহালু আসতে  অনেক যাত্রী নেমে গেল । আরাকু খানিকটা নিচুতে অবস্থিত কারন ওটা উপত্যকা । বেলা ১২ টা নাগাদ পৌঁছালাম আরাকু স্টেশনে । স্টেশন থেকে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম বোরা কেভের উদ্দেশ্যে।
    তাও ৩৭  কিমি রাস্তা যেতে সময় লাগল ঘন্টা খানেক। একে বৃষ্টি, তার ওপর পাহাড়ের আঁকা বাঁকা রাস্তা । টিকিট কেটে ঢুকে পড়লাম, কেভের ভিতরে যেতেই চোখে পড়ল বাঁদরের উপদ্রব ।
  গুহার প্রবেশ পথেই বড়ো সাইন বোর্ডে গুহার ইতিবৃত্ত লেখা আছে । প্রায় ৮০ মিটার গভীর ও ৭০৫ মিটার লম্বা এই গুহা, দেশের সবচেয়ে বড় গুহাগুলির মধ্যে অন্যতম। গুহার প্রবেশ পথেই একটি শিব মন্দির ও তির তির করে বয়ে চলা গোস্তানি নদী চোখে পড়ল সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় । এই গুহার আবিষ্কারক উইলিয়াম কিং জর্জ  (১৮০৭ সালে )। মাত্র ১০০ টাকার বিনিময়ে এক গাইড নেওয়া হল। কথিত আছে , স্থানীয় এক মেষপালকের গরু গুহার ছাদ থেকে পড়ে যায়। গরু খুঁজতে খুঁজতে মেষপালকটি এই গুহাটির কাছে চলে আসে। সেখানে গরুটির পাশে একটি শিবলিঙ্গের মতো দেখতে পাথর চোখে পড়ে তার। এই শিবলিঙ্গই গরুটিকে রক্ষা করেছে মেনে নিয়ে গুহার বাইরে সেটি এনে পুজো শুরু করে সে। যার কথা আগেই বলেছি। সুন্দর ভাবে বানানো ৮৫০টি সিঁড়ি, বড় বড় আলো গুহার স্বাভাবিক প্রাকৃতিক সৌন্দর্য হয়ত নষ্ট করেছে , তবে এর জন্যেই ৮ থেকে ৮০ নির্বিঘ্নে ঘুরতে পারছে । স্ট্যালাগটাইট ও স্ট্যালাগমাইট পাথরের অপরূপ প্রাকৃতিক ভাস্কর্য ও তার ওপর নানা রঙের আলোর খেলা আরও সুদৃশ্য করে তুলেছে।
 গুহার ওপর দিয়ে গোস্তানি নদী থেকে টিপ টিপ করে জল চুঁইয়ে পরে স্ট্যাল্যাকটাইট এবং স্ট্যাল্যাগমাইট পাথরের নানা রূপ পরিবর্তন ঘটায় এবং পর্যটকের চোখে নানা রূপ ধারন করেছে , যেমন  শিব-পাবতী, মা-শিশু, ঋষির দাড়ি, মানব মস্তিষ্ক, মাশরুম, কুমির, মন্দির, গির্জা ইত্যাদি টর্চের আলোয় গাইড দেখালেন ।
  বোরা কেভের বাইরেই আরাকুর বিখ্যাত বাঁশ পোড়া চিকেন খেতে ভুলবেন না। ফেরার পথে পাহাড়ের কোলে ধাপ চাষ আর চারিপাশের বৃষ্টি স্নাত সবুজ জমি মানব চক্ষু সার্থক করে।
আমরা আরাকু থেকে  রাতেই বিশাখাপত্তনম কিরান্ডুল প্যাসেঞ্জার ধরে পরদিন সকালে জাগদলপুর পৌঁছেছিলাম। এছাড়াও বাস সার্ভিস চালু আছে বিশাখাপত্তনম, জেপুর, কোরাপুট, বিজয়ওয়ারা, হায়দ্রাবাদ, রায়পুর, ওড়িশা, অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে ।
 ছত্তিশগড়ে অবস্থিত জগদলপুর মূলত তিরাথগড় ও চিত্রকূট জলপ্রপাত এবং কুটুমসর ও কৈলাস গুহার জন্যই বিখ্যাত । বেশিদিন হয়নি এই রাজ্যের জন্ম , ২০০০ সালে মধ্য প্রদেশ থেকে আলাদা করে গঠিত হয় ভারতের ২৬-তম রাজ্য ছত্তিশগড়। এই রাজ্য তার সবুজ গালিচায় মোড়া প্রকৃতি, ভারতীয় বনাঞ্চল এবং হীরা ও অন্যান্য খনিজ সম্পদের সম্ভার দিয়ে আপনাকে স্বাগত জানাবে।
ঐতিহাসিকদের মতে প্রাচীন দণ্ডকারণ্য, (বর্তমানে ছত্তিশগড়ের একটি অংশ)একদা ভারতের প্রাচীন বাসিন্দাদের বাসভূমি ছিল, রামায়ণ ও মহাভারতে যার উল্লেখ রয়েছে ।  দূষণমুক্ত সবুজ বন, ছবি আঁকার মত জলপ্রপাত, মালভুমি এবং আঁকাবাঁকা নদী চোখকে মুগ্ধ করে। প্রাচীন গুহা ও দুর্গ ছাড়াও ছত্তিশগড়ের অন্য আকর্ষণ হল মাওবাদী । এছাড়াও এখানকার রহস্যময় আদিবাসী জীবন যা পর্যটকদের চুম্বকের মত আকর্ষণ করে । মুসলিম নগন্য, তবে ধর্মান্তরিত খ্রিষ্টানের আধিক্য রয়েছে মুড়িয়া, মাড়িয়া উপজাতির মধ্যে ।
স্টেশন সংলগ্ন হোটেল থেকে ৩২ কিমি পথ ঘন্টা খানেকের মধ্যেই পৌঁছে গেলাম । তিরাথগড়ে ঢোকার মুখে যাত্রী ও গাড়ী পিছু টিকিট কেটে চেক পোস্ট পেরিয়ে এলাম । বাঁদিকের রাস্তা চলে গেছে কুটুমসর গুহার দিকে । দুর্ভাগ্যবশত বর্ষাকাল হওয়ায় গুহা বন্ধ ছিল । তাই ডান দিকের পথ ধরে এগিয়ে চললো গাড়ি তিরাথগড় ফলসের দিকে । গাড়ি থামিয়ে একটু এগিয়েই কয়েক ধাপ নামতেই এক ঝলক দেখা দিল আরণ্যক পরিবেশে রূপসী জলপ্রপাত । তারপর আরও ২১৪টি  পিচ্ছিল সিঁড়ি ভেঙে গড় গড় করে নেমে গেলাম একেবারে নিচে । ১৬০ মি প্রশস্থ ও ২৯৯ ফুট উঁচু থেকে একবারে নিচে এসে পড়ছে সশব্দে । বর্ষাকাল হওয়ায় জলপ্রপাত গুলোর উচ্ছল যৌবনামত্ত রূপ মনে রাখার মত । সাদা ফেনেল জল ওপর থেকে নিচে এসে পাথরের পাশ দিয়ে পথ করে বয়ে চলে যাচ্ছে নিচে । সিঁড়ি নামতে কোনো কষ্টই হয়নি , কিন্তু ঐ খাড়াই সিঁড়ি উঠতে গিয়ে সকলের নাজেহাল অবস্থা । ওপরে আসতেই চোখে পড়লো রাস্তার একপাশে কাঠের তৈরী ঘর সাজানোর হরেক জিনিস । এই অঞ্চলের আতা খুব সস্তা ও বিখ্যাত ।
এরপর গাড়ি এগিয়ে চলল চিত্রকূট জলপ্রপাতের পথে ।তিরাথগড় থেকে চিত্রকূটের দূরত্ব ৭৪ কিমি , যেতে প্রায় ১ঘন্টা ৪৫ মিনিট মত লাগল । পার্কিং করার পর একটু হেঁটে যেতে হল , তার পরই চোখে পড়ল অশ্বক্ষুরাকার, ভারতের বৃহত্তম জলপ্রপাত যা ভারতের নায়াগ্রা নামেও পরিচিত । দৈর্ঘ্যের তুলনায় প্রস্থ অনেক বেশি । বর্ষাকাল হওয়ায় এই জলপ্রপাতের এক অনন্য রূপ চোখে পড়ল । সাধারণত সারা বছরই ইন্দ্রাবতী নদীর জল শান্ত ভাবে বয়ে এসে পাথরের ওপর থেকে দু- তিনটি জায়গা দিয়েই মূলত নিচে পড়ে আর শুনেছি ঐ বয়ে যাওয়া জলে নাকি বোটিং ও হয় । কিন্তু এখন এই জলপ্রপাতের যে রূপ তা রিতিমত ভয় ধরিয়ে দেবে । ৯৫ ফুট ওপর থেকে আছরে পড়ছে নিচের নদীতে । জলের এতো বেগ যে মাটিও ক্ষয় করে আসছে , তার জন্যই জলের রং ঘোলাটে । জল ওপর থেকে যখন নিচে আছরে পড়ছে এতো ধোঁয়া সৃষ্টি হয়েছে ,তার সাথে জলের ঝাপটা এসে লাগছে । চারিপাশটা সুন্দর ভাবে বড় বড় পাথর দিয়ে বাঁধানো।  কিছু অতিউৎসাহী মানুষ স্পেশাল ছবি তুলবে বলে পাথরের একেবারে ধারে চলে যাচ্ছে , তখন মনে হচ্ছিল ছবি তুলতে গিয়ে নিজেই যদি ছবি হয়ে যায় তাহলে সে ছবি কে দেখবে । এর পাশেই একটা মন্দির রয়েছে দেখলাম । যদিও আমরা সেখানে ঢুকিনি । ওদিকে আকাশ ও সেজে গুজে তৈরী হচ্ছিল ।তাই সোজা গাড়িতে উঠে রওনা দিলাম হোটেলের উদ্দেশ্যে , পথে ভালো হোটেল দেখে দাঁড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হলো ড্রাইভারকে । গাড়ি চলার মিনিট দশেকের মধ্যেই মুশল ধারে বৃষ্টি শুরু হলো । পরের  দিন ভোর ৪.১৫ মিনিটে জগদলপুর  থেকে হাওড়া সম্বলেশ্বরী এক্সপ্রেসে রিজার্ভেশন করা ছিল ।
Jagdalpur Araku Vizag
Jagdalpur Araku Vizag 
Jagdalpur Araku Vizag 
Jagdalpur Araku Vizag 
Jagdalpur Araku Vizag 
Jagdalpur Araku Vizag 
Jagdalpur Araku Vizag 
Jagdalpur Araku Vizag
Jagdalpur Araku Vizag 
Jagdalpur Araku Vizag

No comments

Ads Place