Shantiniketan Weekend Tour Experience by Papri Das Roy
আপামোর বাঙালী,রবিপ্রেমী হোক বা না হোক রবি ঠাকুরের এই শান্তিনিকেতনে আসেন নি এমন খুব কমই আছেন।কর্মব্যস্ত জীবনে বেরিয়ে পড়ার অবসর করে নিতেই হয়।ওই পায়ের তলার সরষে গুলোর চাড়া দিয়ে ওঠাও প্রয়োজন।শনিবার সক্কাল সক্কাল ১০ টা ১০ এর শান্তিনিকেতন এ চেপে রওনা দিলাম।আমরা যারা শহুরে তাদের গ্রামের প্রতি একটা আলাদাই টান আছে।শহর ছাড়িয়ে হুহু করে ট্রেন ছুটছে।আমার মনে পড়ে না আমি এক মুহুর্তের জন্যেও জানালা বাইরের দৃশ্য থেকে বিরত থেকেছি কিনা।মাঠ ভর্তি ধান, কোথাও আবার পুড়িয়ে যাওয়া মাঠ।সে আলাদাই সৌন্দর্য।
যাই হোক পৌঁছে গেলাম ১২:৩০ এর মধ্যে।হোটেল এ বিশ্রাম নিয়ে খাওয়া দাওয়া সেরে বেরিয়ে পড়লাম কোপাই এর তীরে।আমার প্রিয় বান্ধবী তো গান গাইতে ভালোবাসে আর কি।তার আবার সময় বিশেষে গান পায়।সেও টোটো করে চলতে চলতে গান গেয়ে উঠল " আজ এ বসন্তে,এত......" আমিও গলা মেলালাম।কোপাই এর নদী শুষ্ক হয়ে যাওয়ার দরুন হেঁটে পারাপার করতে পেরেছিলাম হয়ত।বার বার মনে পড়ে যাচ্ছিল বেলাশেষের সিন টা।"কোপাই নদীর ধার,ফুল মুন নাইট"।দূরে একটা জায়গা দেখিয়ে আমার বান্ধবী কে বললাম "ওই দেখ মনে হয় ওই জায়গায় ক্যামেরা সেট করে টেনেছিল ব্রীজ টা"|কোপাই এর ধারে বাউল গানের আসর বসেছিল।কিছু সময় কাটিয়ে ফিরে এলাম সোনায় মোড়া সোনাঝুরির শোভা দেখতে।হাট থেকে প্রচুর কেনাকাটি করে ক্লান্ত হয়ে গেলেও মাদলের তালে কোমড় দোলাতে ভুলিনি।নাচ টা ভালোলাগার চিরকালই।
তাই মাদলের তালে তাল মিলিয়ে নাচলাম ওদের সাথে।সাথে সামান্য কিছু সাহায্য করলাম।ওদের তো ওটাই রুজিরুটি।ফেরার সময় সোনাঝুরির আড়ালে সূর্যাস্ত,সে ভাষায় বর্ননাতীত।সন্ধ্যা নেমে আসায় ফিরে এলাম হোটেল এ।ইঁদুর বাবাজী পেটে ডাকাডাকি শুরু করায় মুড়ি,তেলেভাজা,সিঙারা দিয়ে তাকে কিছুটা থামানো গেল।যাওয়া থেকেই এক সিনিয়র দাদা মোরগ খুঁজে বেরাচ্ছিল।।তার দেশী মোরগ খাওয়ার শখ জেগেছিল।সন্ধ্যা নামার পর সেও বাজারে রওনা দিয়ে একটা মোরগ কিনে ওখানের একজন লোককে দিয়ে কেটে রান্না করিয়ে নিয়ে এল।উনিও ১০০ টাকা নিয়ে দারুণ রান্না করেছিলেন।প্রায় ১০:৩০ নাগাদ ডিনার সারলাম ওই মোরগ কষা আর রুটি দিয়ে।আমি আর আমার বান্ধবীর তেমন নেশাটেশা নেই।তাই ঘুমিয়ে পড়লাম আর বাকী দাদারা, দিদিরা মনে হয় অ্যান্টিকুইটি তে মজে ছিল।যাই হোক ঘুম ভাঙল প্রায় ৭ টায়।আমার আবার জায়গা নড়লে ঠিক ঘুম আসেনা। তাই সারা রাত কোনো মতে কেটে গেছে।কিন্তু আমার বান্ধবী আবার পড়লেই কুম্ভকর্ণ।টোটো রিজার্ভ করাই ছিল পরদিন কচুরী আর ছোলার ডাল এ ভোজন সেরে সৃজনী শিল্প গ্রাম,মিউজিয়াম,কালী কঙ্কালী তলা সব গুলো একটু একটু করে ঘুরে দেখলাম।কালী কঙ্কালী তলা সতীপীঠ এর অন্যতম পীঠ।পুজো দিয়ে আবার টোটো তে উঠে স্টেশনের দিকে রওনা দিলাম।ফেরার ট্রেন ছিল ২:১০ এ।ফেরার পথে স্টেশনের কাছেই এক হোটেল এ খাওয়া দাওয়া সেরে ট্রেনে চাপলাম।
৫:৩০ এ হাওড়া নেমে মন টা সত্যিই খারাপ লাগছিল।আবার যাব কোনো এক সময়।মন খারাপ নিয়েই ফেরার সময় মজা করে কবিগুরুর লেখা স্মরণ করেই বললাম "ফিরে চল মাটির টানে".....।
সবার মুখে তখন মন খারাপের রেশ তাও কোথাও একটা ভালোলাগা। আবার বেরিয়ে পড়ব কোনো একদিন চেনা গন্ডির সীমা ছেড়ে।
No comments