Page Nav

HIDE

Grid

GRID_STYLE

Hover Effects

Months

{fbt_classic_header}

Breaking News:

latest

TAWANG BOMDILA DIRANG KAZIRANGA TOUR PLAN

পুজোর ছুটি বা গরমের ছুটিতে বাঙালি মানেই নিত্য নতুন পাহাড়ি উপত্যকার খোঁজে নেমে পড়া। গত গরমের ছুটিতে আমরাও গেছিলাম তাওয়াং। " দূর্গম " শব্দের প্রকৃত অর্থ বুঝতে হলে আপনাকে আসতেই হবে এই পথে। সেরা সময় অবশ্যই এপ্রিল মে মাস। উত্তর পূর্ব ভারতের আয়তনে সর্বাপেক্ষা বড়ো এই রাজ্যের জনসংখ্যা মাত্র ১৩ লক্ষের আশেপাশে।ভারত থেকে চীনকে আলাদা করা " ম্যাকমোহন লাইন " এরাজ্যের উপর দিয়ে গেছে। শুধু চীন নয় ভুটান মায়ানমারের সাথেও আন্তর্জাতিক সীমানা ছুঁয়ে আছে এরাজ্যের। আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এরাজ্যে এলে চীন কূটনৈতিক ভাবে গোল বাঁধানোর চেষ্টা করে কিন্তু সেজন্য আমাদের যেতে কোনো সমস্যা নেই। পাহাড় ঘেরা ঘন জঙ্গলের মাঝে শিরা উপশিরার মতো ছড়িয়ে থাকা নদীগুলির নামও ভারী সুন্দর। দিরাং ,সিয়াং,কমেং,সুবনসিরি ,সিয়ুম ইত্যাদি। হাতে সময় নিয়ে বিমানের টিকিট কেটে রাখলে খরচ কম পড়ে ,দীর্ঘ ট্রেন যাত্রার ধকল থেকেও রেহাই পাওয়া যায়। আকাশপথে দমদম থেকে গৌহাটির বড়দোলুই ১ ঘন্টার পথ। নেমে একটা গাড়ি ঠিক করে চলে এলাম কাজিরাঙ্গা ন্যাশনাল পার্ক। আগে থেকেই বুক করা ছিল আসাম পর্যটন দপ্তরের লজ 'বনশ্রী‘ ।ছোট্ট একতলা সুসজ্জিত বাগান ঘেরা কটেজ বেশ পরিপাটি সাজানো গোছানো। স্থানীয় কেয়ারটেকার মুকুলদার পরামর্শে বিকেলটা আশেপাশে ঘুরে কাটিয়ে দিলাম। সন্ধেবেলা ১০০ টাকা টিকিট কেটে দেখে নিলাম স্থানীয় শিল্পীদের বিহু নৃত্য। পরদিন সকালে বাগোরি রেঞ্জ থেকে টিকিট সংগ্রহ করে হাতি সাফারি সেরে নিলাম। গন্ডার হরিণ বাঘমামা সবাই দেখা দিলেন। মাথা পিছু হাতসাফারীর খরচ ৯০০ টাকা। বনানীতে দু রাত কাটিয়ে পরের দিন সকাল সকাল রওনা দিলাম ভালুকপংয়ের উদ্দেশ্যে।১১০ কিলোমিটার এই যাত্রাপথে ব্রহ্মপুত্র নদ পেরোলাম তিন কিলোমিটার দীর্ঘ কালিয়া ভ্রমরা সেতুর উপর দিয়ে। পথে পড়লো তেজপুর। কোলকাতা থেকে বিমানে সরাসরি এখানেও আসা যায় কিন্তু ভাড়া অনেকটাই বেশি।ইতিহাস ঘাটলে জানা যায় এই তেজপুরের পৌরাণিক নাম শোণিতপুর।যেতে যেতে লাঞ্চ সারলাম রাস্তার ধারের ধাবাতে।আস্তে আস্তে জ্যামজট কোলাহল ছাড়িয়ে মসৃন রাস্তা ধরে এগিয়ে গেলাম পশ্চিম কামেং জেলার ভালুকপংয়ে। "জিয়াভরেলী" নদীকে পাশে নিয়ে পথ চলতে চলতে নামেরির জঙ্গলঘেরা রাস্তা আপনাকে মুগ্ধ করবেই। ইনার লাইন পারমিট দেখিয়ে এখানেই সেরে নিলাম রাত্রিবাস। চতুর্থদিনটা একটু স্পেশ্যাল কারণ এদিনই দেশের " প্রথম সূর্যোদয়ের রাজ্যের " সূর্যোদয় চাক্ষুস করলাম। আজকের গন্তব্য " দিরাং " ।দেখলাম টিপি অর্কিড গার্ডেন (রবিবার বন্ধ ),যেখানে হাজার হাজার প্রজাতির অর্কিডের এক আশ্চর্য সহাবস্থান। এরপর ঘন সবুজ ঘেরা আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ ধরে অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে নিরন্তর এগিয়ে চলা সাথে অপরূপা "কামেং " নদী। পাহাড়ি উপত্যকায় ধাপ কেটে ঝুম পদ্ধতিতে চাষআবাদ,ছোট বড়ো পাহাড়ি জনপদ কিংবা অসংখ্য সেনা ছাউনিকে পাশে রেখেই বোমডিলা পৌঁছানো ,ছোট্ট একটা বিরতি নিয়েই আবার রওনা দিরাং এর উদ্দেশ্যে।পথে পড়লো দিরাং মনাস্ট্রি। প্রায় ছয় ঘন্টা দীর্ঘ যাত্রাপথের এখানেই শেষ। ঠাঁই হলো আপেল কিউয়ি বাগানে সাজানো সুন্দর দিরাং ভ্যালিতে।
পরদিন সকাল সকাল উঠে দিরাং বাজারে আলু পরোটা চা সহযোগে প্রাতঃরাশ সেরে রওনা দিলাম সেলা পাসের দিকে। যার উচ্চতা দিরাংয়ের প্রায় তিন গুন। পথে পড়লো হট স্প্রিং,দিরাং ওয়ার মেমোরিয়াল। কিছুক্ষন পরই শুরু হলো গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি সাথে হাওয়া। সেলা তে পৌঁছে বেশিক্ষন দাঁড়ালাম না সবারই অল্প অল্প শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল।ফেরার পথে নামলাম যশোবন্তগড়ে।সমস্ত গাড়ি মিলিটারি হোক বা প্রাইভেট শহিদ সৈনিক যশোবন্তের প্রতি পরম শ্রদ্ধায় তার কাছে অনুমতি নিয়ে তারপর স্থান ত‍্যগ করে।এটাই প্রথা। " যশবন্ত সিং রাওয়াত মেমরিয়াল " মানেই ১৯৬২ সালের ভারত চীন যুদ্ধের চাক্ষুস ইতিহাস। উত্তরপ্রদেশের গাড়োয়াল রেজিমেন্টের মাত্র ২১ বছরের যুবক যশবন্ত একাই প্রায় ৭২ ঘন্টা চীনা সৈন্যদের ঠেকিয়ে এই গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি আগলে রেখেছিলেন ।তিনি এই অসম লড়াইয়ে বীরের মতো মৃত্যু বরণ করেন। ড্রাইভার দাদার কাছে জানতে পারলাম সোলা নামে একটা মেয়ের সাথে ওর প্রেম ছিল।সে যশবন্তকে এতোটা ভালোবাসতো যে তার মৃত্যুতে আত্মহত্যা করে।তার নামেই আজ সেলা পাস।সেলা লেক।সোলার বন্ধু নুরা নামে একটা মেয়েও এই যুদ্ধে যশবন্তদের নানা ভাবে সাহায্য করতো।তার নামেও এখানে রয়েছে নুরা লেক। যশবন্তগড়ে ৮-১০ জন জওয়ান রয়েছেন যাদের মূল কাজ যশবন্তের দেখভাল করা ,দুবেলা ধূপ ধূনো দেওয়া বিছানা বালিশ পরিষ্কার করা। এই জওয়ানরা এখানে জনসংযোগের উপর জোর দেন। আপনি যত খুশি ফ্রীতে চা পান করতে পারেন।সামান‍্য পয়সাতেই সেনাবাহিনীর ক‍্যান্টিনে পেয়ে যাবেন সিঙাড়া বা পকোড়া। পরের গন্তব্য জং উপত্যকা , নুরনাং জলপ্রপাত ও দেখলাম। জং একটা পুরোনো প্রাচীন জনপদ। এখানে বাজার দোকানপাট সবকিছু রয়েছে। এখানথেকে তাওয়াং ৫০ কিমি দূরে। সন্ধ্যে নামার আগেই পৌঁছে গেলাম তাওয়াং। আগে থেকে বুক করে রাখা হোটেলে ঢুকেই এলিয়ে পড়লাম বিছানায়। সপ্তমদিন ঘুম থেকে উঠেই জানালার পর্দা সরাতেই চোখে পড়লো হলুদ রঙের তাওয়াং মনাস্ট্রি। আসার সময় ফিকে আলোতে দেখলেও দিনের আলোয় সত্যই অপূর্ব দেখাচ্ছিল। " তাওয়াং " শব্দের অর্থ ঘোড়ার আশীর্বাদ। জনশ্রুতি আছে যে লামারা এখানে ঘোড়ায় চড়ে এসেছিলেন। এই জায়গার প্রতিকূলতার জন্যই জায়গাটিকে গুমফা তৈরির জন্য বেছে নেন। এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম বৌদ্ধ গুমফা এটাই।এখানে ২৬ ফুট উচ্চতার সুবিশাল সোনালী বৌদ্ধমূর্তি বিদ্যমান।বুমলা পাস যাওয়ার অনুমতি পত্র পেতে সেনাবাহিনীর দপ্তরে প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র ও ছবি জমা দিয়ে এরপর গেলাম ওয়ার মেমোরিয়ালে ,সেনাবাহিনীর তত্তাবধানে এখানে রোজ সন্ধেবেলা লাইট এন্ড সাউন্ড শো হয়। টিকিট মাত্র ২০ টাকা।শো দেখে হোটেলে ফিরে খাওয়াদাওয়া সেরে বিছানা নিলাম। বিকেলে ড্রাইভার দাদা সেনাবাহিনীর দপ্তর থেকে আমাদের বুমলা পাস যাওয়ার প্রয়োজনীয় নথি সংগ্রহ করে রেখেছিলো তাই পরের দিন সকালে বেরিয়ে পড়লাম। তাওয়াং থেকে বুমলার দূরত্ব মাত্র আটত্রিশ কিলোমিটার কিন্তু ১৫২০০ ফুট উচ্চতার ভারতীয় সেনাবাহিনীর সর্বোচ্চ ঘাঁটি পৌঁছনোর রাস্তা ভয়ানক দুর্গম। রাস্তায় জমে থাকা বরফে গাড়ির চাকা বার বার পিছলে যাচ্ছিলো। বুমলা পাস পৌঁছে সেনা ছাউনিতে কিছুক্ষন বিশ্রাম সেরে এক কিলোমিটার হেঁটে চীন সেনা ঘাঁটি দেখে গেলাম মাধুরী লেক দেখতে এরপর ফিরে আসা তাওয়াং এ।
নবম দিন পুরোনো পথে ফায়ার আসার পালা। সকাল সকাল প্রাতঃরাশ সেরে উঠে পড়লাম গাড়িতে,গন্তব্য বমডিলা। রাত্রিবাস ওখানেই।
পরের দিন বমডিলা থেকে গাড়িতে গুয়াহাটি। এবার ঘরে ফেরার পালা।
গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
১. অনলাইন পার্মিট করা যায় www.arunachalilp.com ওয়েবসাইট এ।
২.মধ্য মানের ডবল বেডরুমের হোটেল ভাড়া ১২০০/- থেকে ১৫০০/- প্রতিদিন
৩.কাজিরাঙ্গাতে মাথা পিছু হাতসাফারীর খরচ ৯০০ টাকা।
৪.পুরো ট্রিপের গাড়ি নিলে আনুমানিক ৪০০০ টাকা দিনপ্রতি লাগবে।
৫.ভালো ড্রাইভার নিতে হবে কারণ রাস্তা খুবই দূর্গম।
৬.শ্বাস কষ্ট হতে পারে, যাওয়ার আগে ডাক্তারের পরার্মশ নেবেন
বেড়ানোর মাস্টার প্ল্যান
  • [accordion]
    • ১১ দিনের প্ল্যান
      • ১ম দিনঃ ট্রেনে গুয়াহাটি, সেখান থেকে বাসে তেজপুর অথবা সরাসরি ফ্লাইটে তেজপুর পৌঁছানো। গাড়িতে/বাসে কাজিরাঙ্গা। হোটেলে চেক ইন। বিকেলে জিপ সাফারিতে জঙ্গল ভ্রমণ। রাত্রিবাস কাজিরাঙ্গায়।
        ২য় দিনঃ সকালে হাতির পিঠে অরণ্যভ্রমণ, লোকাল সাইটসিয়িং, বিকেলে জিপ সাফারিতে জঙ্গলে। রাত্রিবাস কাজিরাঙ্গায়।

        ৩য় দিনঃ কামেং/জিয়াভরলি নদীর তীরে ভালুকপং-এ পৌঁছানো। নদীতে নৌকায় ভ্রমণ। রাত্রিবাস ভালুকপং-এ ।

        ৪র্থ দিনঃ ভালুকপং থেকে দিরাং-এর দিকে রওনা। পথে টিপি অর্কিডিয়াম (রবিবারে বন্ধ) দেখে নেওয়া। টেঙ্গা ও রূপা উপত্যকা পেরিয়ে শেষা ঝরনা দেখে বমডিলায় দুপুরের খাওয়া। বমডিলা আপার মনাস্ট্রি দেখে নিয়ে সন্ধ্যায় দিরাং-এ পৌঁছানো। রাত্রিবাস দিরাং-এ। 

        ৫ম দিনঃ দিরাং-এ সাইট সিয়িং (সাংতি উপত্যকা, দিরাং মনাস্ট্রি ইত্যাদি)। রাত্রিবাস দিরাং-এ।

        ৬ষ্ঠ দিনঃ দিরাং থেকে তাওয়াং-এর পথে রওনা। পথে চুগ উপত্যকা, হট স্প্রিং, দিরাং ওয়ার মেমোরিয়াল দেখে সে লা পাসে পৌঁছানো। এরপর যশবন্তগড় ওয়ার মেমোরিয়াল, নুরানাং জলপ্রপাত হয়ে সন্ধ্যায় তাওয়াং পৌঁছানো। রাত্রিবাস তাওয়াং-এ।

        ৭ম দিনঃ তাওয়াং সাইটসিয়িং (তাওয়াং মনাস্ট্রি, হ্যান্ডিক্র্যাফট সেন্টার, তাওয়াং ওয়ার মেমোরিয়াল, আনি মনাস্ট্রি)। রাত্রিবাস তাওয়াং-এ।

        ৮ম দিনঃ তাওয়াং থেকে তাকসাং মনাস্ট্রি, জুং ঝরনা, সাঙ্গাসার লেক, ওয়াই জাংশন, পিটি সো লেক এবং বুমলা পাস বেড়িয়ে নেওয়া। রাত্রিবাস তাওয়াং-এ।

        ৯ম দিনঃ একই পথে তাওয়াং থেকে দিরাং হয়ে বমডিলায় ফেরা। হ্যান্ডিক্র্যাফট সেন্টার (রবিবারে বন্ধ) ঘুরে নেওয়া। রাত্রিবাস বমডিলায়।

        ১০ম দিনঃ বমডিলা লোয়ার মনাস্ট্রি দেখে তেজপুরে ফেরা। রাত্রিবাস তেজপুরে।

        ১১শ দিনঃ তেজপুর থেকে সরাসরি ফেরার ফ্লাইট অথবা গুয়াহাটি ফিরে ট্রেন ধরা।

        *** দিরাং থেকে তাওয়াং যেহেতু একইপথে যাতায়াত সেহেতু পথে দ্রষ্টব্যগুলি একবারে না দেখে কয়েকটা ফেরার সময়েও দেখে নেওয়া যায়। হাতে সময় থাকলে দিরাং-এ আর একদিন থেকেও কিছুটা দেখে নেওয়া যায়।
        *** তাওয়াং যেতে অনুমতিপত্র লাগবে। http://arunachalilp.com/ ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে । বুমলা যাওয়ার অনুমতিপত্রের ব্যাপারে তাওয়াং-এ পৌঁছে খোঁজ নিতে হবে।
    • ১০ দিনের প্ল্যান
      • ১ম দিনঃ ট্রেনে গুয়াহাটি, সেখান থেকে নামেরি ন্যাশনাল পার্ক । রাত্রিবাস নামেরি ইকো ক্যাম্প (৫ ঘন্টার যাত্রা )
        ২য় দিনঃ সকালে ফরেস্ট গার্ড এর তত্ত্বাবধানে জঙ্গল ভ্রমণ বিকালে river rafting । রাত্রিবাস নামেরি ইকো ক্যাম্প
        ৩য় দিনঃ নামেরি থেকে দিরাং (৭ ঘন্টার যাত্রা )

        ৪র্থ দিনঃ দিরাং ,সঙ্গতি ভ্যালি সাইডিসিন
        ৫ম দিনঃ দিরাং থেকে তাওয়াং (৭ )
        ৬ষ্ঠ দিনঃ তাওয়াং লোকাল সাইডিসিন
        ৭ম দিনঃ বুমলা পাস ট্রিপ
        ৮ম দিনঃ তাওয়াং থেকে বোমডিলা (৮ ঘন্টার যাত্রা )
        ৯ম দিন :বোমডিলা থেকে তেজপুর
        ১০ম দিন :তেজপুর থেকে প্লেন বা গুয়াহাটি থেকে ট্রেন

No comments

Ads Place