Page Nav

HIDE

Grid

GRID_STYLE

Hover Effects

Months

{fbt_classic_header}

Breaking News:

latest

Bhutan Travel Story 2019

ভূস্বর্গের আরেক নাম ভুটান লিখেছেন মৈনাক সেন
শেষ দুই তিন মাস ধরে আমাদের ঘুরতে যাওয়ার প্ল্যান চলছে। কিন্তু কোনো না কোনো কারনে সেটা ভেস্তে যাচ্ছিলো। প্রথমে ঠিক হয়েছিল নৈনিতাল, কৌশানি, মুন্সিয়ারি। কিন্তু কিছু কারন বশতঃ সেটা  বাতিল করতে হয়। তারপর ঠিক হল নৈনিতাল আর জিম করবেট। কিন্তু সেটাও হলনা। শেষমেষ ঠিক হল ভুটান। আমাদের সঙ্গে জুড়ে গেল সুব্রত,  তৃষা আর তাদের মিষ্টি মেয়ে 'মিষ্টি'। প্রথমেই ট্রেন এর টিকিট কাটা হলো ১৭ই ফেব্রুয়ারি যাওয়ার আর ২১শে ফেরার। এবার হোটেল আর ক্যাব খোঁজার পালা। আমার এক কলেজ ফ্রেন্ড কিছুদিন আগেই ভুটান ঘুরে এসেছে। তাকেই কন্টাক্ট করলাম। তার কথা মতো ভিউ পয়েন্ট লজ বুক করা হলো তিন রাত্রির জন্য আর সঙ্গে গাড়িও বুক করা হলো। অ্যাডভান্স কিছুই করতে হয়নি। হোটেল বুকিং.কম থেকে বুক করা হলো আর ক্যাব ড্রাইভার এর সঙ্গে হোয়াটস্যাপ এ পুরো কথাবার্তা হলো। অফ সিজন হওয়াতে রেটটা কমই পড়লো। যত দিন যাচ্ছিলো তত উত্তেজনা বাড়ছিলো। 
অবশেষে এলো ১৭ই ফ্রেব্রুয়ার, ট্রেন এ চেপে আমরা পৌঁছলাম জয়গাওতে..সেখানে একরাত্রি কাটানোর কথা কারণ পরদিন সকাল সকাল পারমিটটা পাওয়া যাবে। সকাল ৭.৩০ টাই রিসেপশন থেকে জানালো আমাদের ড্রাইভার সঞ্জয়বাবু চলে এসেছেন। পারমিটের যাবতীয় পেপার তার হাতে তুলে দিলাম যাতে সে তাড়াতাড়ি লাইন এ দাঁড়িয়ে আমাদের পারমিটটা করতে পারে। আমরা রেডি হয়ে ৮.৩০ টাই ইমিগ্রেশন অফিস এ পৌছে শুরুতেই পারমিট পেয়ে গেলাম। এবার ভুটান যাত্রা শুরু। আমাদের বুকিং তিনদিনই পারো তে। ফুন্টসোলিং থেকে পারোর দূরত্ব ৪ ঘন্টার। হোটেল পৌঁছনোর আগেই আমরা দেখে নিলাম পারো নদী আর পারো এয়ারপোর্ট। মুগ্ধ চোখে দেখলাম এই দুই জায়গা। পারো নদীর জল কুলকুল শব্দে বয়ে চলছে বিরামহীনভাবে আর এয়ারপোর্ট ভিউ দুর্দান্ত। লিখে বোঝানো অসম্ভব। হোটেল যখন পৌঁছলাম তখন বাজে বিকেল চারটে ।পুরো জার্নিতে কিছুই খাওয়া হয়নি, তাই তখনই অর্ডার করা হলো গরম গরম রুটি আর চিকেন কষা। হোটেল রুম এ যখন প্রবেশ করলাম আমাদের মুগ্ধ হওয়া বাকি ছিলো। রুম থেকে হিল ভিউ অসাধারণ। রুমে বসেই দূরে পাহাড়ের বুকে পারো তাকতসং দৃশ্যমান। জানালার ধারে বসেই বিকেলটা কেটে গেল। 
পরদিন সকালে বেরোলাম পারো তাকতসং দেখতে। ট্রেক করেই যেতে হয়। কিন্তু আমাদের সময় কম ছিলো, তাই ঘোড়ার পিঠে চড়ে পাহাড়ে ওঠা শুরু হলো। সে এক ভয়াবহ অভিজ্ঞতা৷ খাদের ধার দিয়ে ঘোড়া যখন যাচ্ছিলো তখন প্রাণ পাখিটা উড়ে যাবার মতন অবস্থা। ১ ঘন্টার কিছু বেশি সময়ে ঘোড়া ক্যাফেটেরিয়া পর্যন্ত পৌছলো। ক্যাফেটেরিয়া থেকে আরো ১ ঘন্টা পায়ে হেটে ট্রেক করতে হয় তাকসাং পৌঁছতে হলে। আমরা ক্যাফেটেরিয়াতে বসেই এই সৌন্দর্য উপভোগ করলাম। পাহাড় থেকে নেমে গাড়িতে রওনা দিলাম ন্যাশনাল মিউজিয়াম এর উদ্যেশ্যে। সেখান থেকেও পারোর সৌন্দর্য অসাধারণ। মিউজিয়াম দর্শন করে আমাদের পরের গন্তব্য হলো চেলেলা পাস। পথেই শুনলাম তুষারপাত হচ্ছে তাই গাড়ি যাবেনা। মনটা খারাপ হয়ে গেল। আমাদের বিমর্ষ মুখ দেখে সঞ্জয়দা বলল 'চলো যাওয়া যাক চেলেলা পাস, যতটা যাওয়া যাই, ততটা নিয়ে যাবো'। মনটা আবার নেচে উঠলো এটা শুনে। পাহাড়ে কিছুটা উঠতেই রাস্তার দুধারে বরফের স্তুপ চোখে পড়লো। যত এগোচি তত বেশি বরফ চোখে পড়লো। আর যখন ২২কিমি বাকি,তখন ড্রাইভারদাদা বলল আর গাড়ি নিয়ে যাওয়া যাবেনা,স্কিট করার চান্স আছে। গাড়ি থেকে নেমে আমাদের জন্য সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছিলো। শুরু হলো তুষারপাত। জীবনে প্রথম চাক্ষুস করেছি এই দৃশ্য যা কখনো ভোলার নয়। 
পরদিন ছিলো থিম্পু যাত্রা, ভুটানের রাজধানী শহর। ভুটান মানেই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য,সে যেখানেই যাওয়া হোক। থিম্পুতে বৌদ্ধ পার্ক, কিং প্যালেস, থিম্পু রিভার দেখে যাওয়া হলো হ্যান্ডিক্রাফট মার্কেটে। সব জিনিসেরই দাম বেশি। তাই কেনাকাটাও সীমিত থাকলো। থিম্পু থেকে পারো টাউন এ এলাম। সেখানে কিছু কেনাকাটা করা হলো। 
পরদিন ফেরার পালা। বুকভরা ভালোবাসা আর একটু মন খারাপ নিয়ে ভুটান ছাড়লাম। জীবন আবার কখনো একঘেয়ে হয়ে উঠলে আসব এখানে সমস্ত ক্লান্তি দূর করতে। ততদিনের অপেক্ষা..
একটা কথা বলতেই ভুলে গেলাম..আপনি খাদ্যরসিক হলে অবশ্যই ট্রাই করবেন Ema Datshi, Kewa Datshi, আর any item of pork..Red Wine (Takin)or Peach Wine (Zumzin) ও taste করে দেখতে পারেন। সস্তা আর খেতেও মন্দ নয়।
খরচ খরচা
শিয়ালদহ থেকে হাসিমারা কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেস (13149) 3rd এসি : ১০১৫ টাকা
হাসিমারা থেকে জয়গাও/ফুন্টশিলিং অটো /রিসার্ভ গাড়ি  : ৪০০ টাকা
জয়গাও হোটেল ভাড়া : ৭০০-৯০০ টাকা
চার দিনের গাড়িভাড়া জয়গাও থেকে জয়গাও : ২৫০০/দিনপ্রতি
ভুটান এ হোটেল ভাড়া :২০০০টাকা /দিনপ্রতি
ভুটানে খাওয়ার খরচ :৩০০ টাকা  ( ভাত + ডাল + চিকেন/পর্ক কারি + ডাল + পাঁপড় ) , ২৫০ টাকা (ভাত/রুটি + ডাল + সবজি +পাঁপড়  )
 
 
 
 
 
 
 

No comments

Ads Place