Page Nav

HIDE

Grid

GRID_STYLE

Hover Effects

Months

{fbt_classic_header}

Breaking News:

latest

Kolkata to Mukutmanipur By Mousam Mukhopadhyay

প্রায় ছয় মাস ধরে চলতে থাকা প্ল্যান অবশেষে বাস্তবায়িত হলো ২৩শে নভেম্বর, ২০১৮ তে..
ভোর ৪.৩০ এ শুরু হলো যাত্রা.. এবারে বাইক নিয়েই..এবং একটিই বাইক আমরা দুই বন্ধু.... গন্তব্য মুকুটমনিপুর..
দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে অনায়াসেই যাওয়া যেতো.. কিন্তু ওই এ্যডভেঞ্চারের নেশা আর যায় কোথায়? সুতরাং.. রাস্তা খুব একটা ভালো নয় জেনেও আমরা বেছে নিলাম জঙ্গলের রাস্তা (তারকেশ্বর-আরামবাগ-জয়পুর-বিষ্ণুপুর-নাকাইজুরি-তালডাংরা-খাতরা) ধরেই যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। তারকেশ্বর ক্রস করার পরই রাস্তা ভুল করা শুরু হলো... যদিও সেটার পিছনে আমাদের অবদানই ১০০%...শহরের ধোঁয়া, ধুলো, শব্দদানব দের হার মানিয়ে আমরা পৌঁছলাম রিসর্ট বনলতা.. ঘড়ি তে তখন ৮.৪৫.. জয়পুর জঙ্গল ঠিক যেখান থেকে শুরু হয় সেখানেই এই রিসর্ট বনলতা... এক মায়াবী পরিবেশ যেনো আমাদের গ্রাস করতে লাগলো.. আমরা ভেবেছিলাম ১৫-২০ মিনিট একটু দাঁড়িয়ে.. একটু ছবি তুলে.. আর একটু চা টা খেয়ে আবার যাত্রা শুরু করবো... ও বাবা.. ঘড়ির দিকে যখন চোখ টা গেলো তখন প্রায় ১০টা.... তবে রিসর্ট বনলতার পরিবেশের পাশাপাশি এখানকার চা ও নিঃসন্দেহে অসাধারণ ছিল... যাই হোক... যাত্রা আবার শুরু হলো.. দুই দিকে শুধু শাল গাছের দল ছুটে চলেছে আর মাঝে মাঝে গাড়ি আস্তে চালানোর অনুরোধ সম্বলিত সাইনবোর্ড কারন সেই সব জায়গা গুলো হাতি, হরিণ দের বিচরণক্ষেত্র... বারবার মনে হচ্ছিলো এই বুঝি আমাদের সামনে হাতি চলে এলো... কিন্তু না!! তেমন কিচ্ছুটি হলোনা... জঙ্গল এলাকার ভিতরে কোনও হোটেল চোখে পড়লোনা... কিনতু পেট কে সে কথা বোঝায় কে? অগত্যা বাড়ি থেকে আনা রুটি- আলুভাজা দিয়ে পেট কে সান্ত্বনা দিলাম আমরা..... ঘড়ির কাঁটা তখন ১১টা ছুঁইছুঁই... এই ভাবে রাস্তা ভুল করে করে খাতড়া গিয়ে ঠেকলাম ১২টায়... আমরা হোটেল টা খাতড়া তেই নিয়েছিলাম.. সেখানে স্নান, লাঞ্চ সেরে আবার ২ টা নাগাদ রওনা দিলাম আমাদের ডেস্টিনেশান মুকুটমনিপুর..... অসাধারণ সুন্দর রাস্তা ধরে বাইক চালানোর আনন্দে সাইনবোর্ড দেখতেই ভুলে গেলাম... সোজা আরও প্রায় ১৫ কিমি যাওয়ার পর হুঁশ ফিরল.. কেউ যেনো একটা বলেছিলো j খাতড়া থেকে মুকুটমনিপুর ৭কিমি দূরত্ব... আবার বাইক ঘুরিয়ে যাত্রা শুরু... আসলে এই জটিল জীবন, প্যাঁচাল দিন গুলোর বাইরে বেরোতে পেরে মন ই যেনো বারবার ইচ্ছে করেই ভুল করতে চাইছিল... যেনো বলছিলো এই সহজ সরল, টাকা পয়সার হিসেবে মগ্ন না থাকা জায়গা টা তেই যেনো থেকে যাই...
যাক... অবশেষে পৌঁছলাম মুকুটমনিপুর.. ওপরে নীল আকাশ.. নীচে কংসাবতীর নীল জল.. সাথে ওই সহজ সরল মানুষ গুলোর স্থানীয় ভাষায় কথা... সূর্য তখন অস্তাচলে.. নীল রঙ তখন হয়ে এসেছে কমলা.. বাইক তুললাম এক নৌকায়.. রওনা হলাম ডীয়ার পার্কের দিকে। আমাদের হরিন ভাগ্য খুব একটা প্রসন্ন ছিলোনা। হরিনের দল দেখার পরিবর্তে একটিমাত্র হরিন ই চোখে পড়লো। তাও সে আমাদের দেখেই দৌড় লাগালো তার ডেরার দিকে।
ডীয়ার পার্ক থেকে ফেরার মূহুর্তটা না তো ব্যাখ্যা করা যায় আর না তো কখনো ভোলা যায়। মনে হয় তখন ৬.৩০ বাজবে। শীতকালের আগমন অলরেডি হয়ে গেছে। কাঁপুনি না দিলেও একটা সোয়েটারের অভাব বেশ অনুভব করা যাচ্ছিলো। ক্লান্ত পর্যটক রা সকলেই ফিরে গিয়েছেন নিজনিজ জায়গায়। চারপাশে প্রানী বলতে তখন আমি.. আমার বন্ধু বিপ্লব.. নৌকার মাঝি.. আর হাট থেকে ঘরে ফেরা ২ জন সাঁওতাল। অন্ধকারের নীরবতা এক মূহুর্তে ভেঙে খানখান করে দিলো পাশের দ্বীপ থেকে আসা এক অজানা পাখির ডাক। আর অন্যদিকে উজ্জ্বল চাঁদের ছটা ঠিকরে পড়ছে জলের ওপর.. ওই ছটায়... ওই অচেনা পাখির ডাক কয়েক মূহুর্তের জন্য বড় আনমনা করে দিয়েছিলো আমাদের। মনে হয়েছিলো সময় টা এখানেই থেমে যাক। আমাদের নৌকা তখন এগিয়ে চলেছে। এগিয়ে চললাম রোজকার জটিল, হিসাবী, ব্যস্ত জীবনের দিকে.....
ভালো থেকো মুকুটমনিপুর। ❤️
আমাদের এই ভ্রমণের কিছু ছবি দিলাম। একটা ভিডিও বানানোর চেষ্টা করেছি... সেটারও লিঙ্ক দিলাম.. সময় পেলে দেখবেন। আশা করি খুব খারাপ লাগবেনা....
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 

No comments

Ads Place